Shipping to EU, Switzerland
Fast, environmentally friendly shipping with DHL
Free shipping from 40€
উত্তরখন্ড

উত্তরখন্ড

নবমীর শাড়ী পড়া

শাড়ীটা টিয়া যেবার নবমীতে পড়ল, কেনার সময় মনে হয়েছিল–এত সুন্দর, পড়ার পর মনে হল এক ধাক্কায় বড় হয়ে গেল। নিজেকে কলেজ প্রফেসর লাগছিল।স্প্যানিশ ক্লাসে শিখেছে *soy profesora*. আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজেকে *soy profesora*.বলে ভেংচি কেটে নিল।একটু আগেই মাল বকা খেয়েছিল, কিন্তু তাতে কি হয়েছে,পিয়া কুঁচি কুঁচি করে শাড়ী পড়িয়ে দিল।
শাড়ী পড়ে টিয়া যেন হাওয়ায় ভাসতে ভাসতে পূজা মন্ডপে গেল।মা ঠিক বলেছিলেন— নিজের শাড়ী খুব যত্নে সামলাচ্ছিল টিয়া,যেন কিছু না হয়। লক্ষ্মীপুজোর পর শাড়ী কোলে করে ড্রাই ক্লীনার এর কাছে নিয়ে গেছিল। আঁচল চাপা দিয়ে মা হাসছিলেন খুব।
মাসতুতো দিদির বিয়েতে তো সামনে আঁচল দিয়ে খুব স্টাইল মারল।মাও রাগ ফেলে শাড়ীটা পড়তে সাহায্য করলেন। সেফটিপিন দিয়ে আটকানো শাড়ী পড়ে টিয়া তো নেচেও ফেলল একটু।


সময়ের স্রোতে


কলেজ পাসের কয়েক মাসের মধ্যে টিয়া দেশ ছেড়ে চলে এলো বহুদূরে উচ্চশিক্ষার জন্য।
বন্ধু, অভিজ্ঞতা,জীবনদর্শন আসতে আসতে ভরে উঠতে লাগল তার ঝুলি।কালো শাড়ীটা টিয়ার সাথে সাথেই ঘুরতে লাগলো।
প্রথম তখন বিদেশে পড়তে এলো টিয়া,মা স্যুটকেসে শাড়ী টা গুছিয়ে দিয়েছিলেন, বলেছিলেন মাঝে মাঝে পড়িস।শাড়ীটা পড়ে দীপাবলীর উৎসবে সে নেচেও ছিল।তখন ইন্টার্নশিপ করতে অন্য এক দেশে গেল,টিয়া কাঁধের ব্যাগে ভরে নিয়ে গেল শাড়ীটা।বহুবছরের সঙ্গী এই শাড়ী।তাই তো এত নরম, পড়তে এত আরাম।শাড়ীটা যেন জড়িয়ে ধরে জমে থাকা সব স্মৃতির ওম নিয়ে।


অনুষ্ঠানের দিন


“” দিভাই, নিজেই শাড়ীটা ইস্ত্রী করেছিলি যখন, আঁচলটা আগে করে পিন দিয়ে দিলে পারতিস।””

টিয়ার সম্বিত ফেরে পিয়ার গুরুগম্ভীর গলায়।শাড়ী পড়তে পড়তে অন্যমনস্ক হয়ে পড়েছিল টিয়া,মনটা চলে গিয়েছিল শাড়ীবেলার গল্পে।বোনের আদরমাখা বকা,গল্পের ফাঁকে ফাঁকে আঁচল হয়ে গেল।তারপর পিয়ার নির্দেশানুযায়ী টিয়া শাড়ীর কুঁচি করল।কুঁচির ফাঁকে ফাঁকে মিশে থাকে তার জীবনের কথাএকঘন্টা লাগল টিয়ার তৈরী হতে। বেরনোর আগে আয়নায় একবার তাকিয়ে দেখল নিজেকে টিয়া — এ কোন নারী তাকিয়ে আছে তার দিকে ?? টিয়া বোধহয় অনেকদিন নিজেকে দেখেনি এত গভীরভাবে। সেদিনের সেই মেয়ে, চেঁচিয়ে বেড়াত, লাফিয়ে চলত, কবে হয়ে উঠল এত ব্যক্তিত্বময়ী,শ্রীময়ী।
শেষবারের মত আয়নাতে দেখে স্মিত হেসে দরজা বন্ধ করল টিয়া। দীপাবলীর সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানটি অন্য শহরে হবে,প্রায় ৭০ কি মিঃ দূরে।আস্তে আস্তে শাড়ী সামলিয়ে, চালকের আসনে বসল টিয়া– এখন আর শাড়ী কোথাও জড়িয়ে যায়না।

2 comments

  1. Khub valo laglo. Aro ei rokom Galpo hole mondo na

    1. DanceofChaos

      Ami chesta korbo

Comments are closed.