Shipping to EU, Switzerland
Fast, environmentally friendly shipping with DHL
Free shipping from 40€

টিয়া আর তার শাড়ি কাহিনী

Bengali Fiction by Danceofchaos


#tiyasaree_bengali

ভূমিকা

বছর দশেক আগে

উত্তরখন্ড

To read the whole story at once, scroll down

ভূমিকা

দিভাই, শাড়ীটা ইস্ত্রী করেছিলি যখন, আঁচলটা আগে করে পিন দিয়ে দিলে পারতিস।” 

স্কাইপের পর্দাতে ভেসে এলো পিয়ার গুরুগম্ভীর স্বর।

টিয়া মিনমিন করে “পরেছি তো”, বলে আঁচল নিয়ে পড়ল।

টিয়া আর পিয়া  দুই পিঠাপিঠি বোন: একসাথে বড় হওয়া, ঝগড়া, মারামারি, আবার গলায়-গলায় বন্ধুত্ব।

তারপর বড় হয়ে ছিটকে গেল দুজনে পৃথিবীর দু প্রান্তে।

পিয়া তাও দেশে আছে, টিয়া সেই সাগরপাড়ে।

মা,বাবা একবার বড় মেয়ের কাছে, একবার ছোট মেয়ের কাছে ঘুরে আসেন।

দুজনের কেউই বিয়ে করেনি।

দুজন স্বাধীন, স্বনির্ভর মেয়েকে দেখে মাসী, পিসি বৌদিদের চিন্তা হয়।

দুই বোনের বাবা মা এ ব্যাপারে নিশ্চিন্ত। আমরা আমাদের কাজ করেছি, দুজনকেই শিক্ষিতা, ভদ্র, স্বনির্ভর হিসাবে তৈরী করেছি। মেয়েরা তাদের রুচি মত পাত্র নির্বাচন করে নেবে। ওরা দুজন আমাদের গর্ব, বোঝা নয়।

পিয়া রাশভারী সুদক্ষ অধ্যাপিকা। শাড়ী পরে যখন যায় সে, দারুণ ব্যক্তিত্বময়ী লাগে তাকে। 

টিয়া থাকে পশ্চিমদেশের এক শহরে।এক বহুজাতিক সংস্থার উঁচু পদে আছে।

কাজের জগতে তাদের দুইবোনেরই সুনাম আছে বেশ।

 ত্রিশের কাছে এসেও শাড়ী পরায় টিয়া পিয়ার মত পোক্ত হয়নি। কাজের জায়গায় স্যূট, প্যান্ট পরে, বন্ধুদের সাথে অন্য কিছু।

প্রবাসে দূর্গাপজো, বিজয়া সম্মিলনীতে ওই যা একটু পরা, বেল্ট দিয়ে, ডজনখানেক সেফটিপিন লাগিয়ে। মডার্ন ড্রেসিং বলে টলে একটা জগাখিচুড়ী করা অভ্যেস।

দিদি,বৌদিরা বলে বটে :”এখনও শাড়ী পরতে শিখলে না। বিয়ের পর কি করবে?”

টিয়া কান দেয় না। তোমাদের মত বসে বসে নিখুঁত শাড়ী পরার অভ্যেস করার সময় আমার নেই। বিয়ে করব যখন দেখা যাবে, এখন পারছি না তার জন্য তৈরী হতে।

আজকের দিনটা তবে একটু আলাদা।

আজকে টিয়া হোমড়া চোমড়াদের সামনে দেওয়ালীর আনুষ্ঠান সঞ্চালন করবে। স্কুলে পড়ার সময় ভাল সঞ্চালন করত, কলেজের পর আর হয়ে ওঠেনি এসব করা। মাঝে মাঝেই করতে ইচ্ছে করত। সুযোগ বা যোগাযোগ হয়ে উঠতনা।

অফিসের কনফারেন্সে টিয়ার দৃপ্ত বাচনভঙ্গি আর উচ্চারণ শুনে দক্ষিনী বিজয়াদি মুগ্ধ।তিনি টিয়াকে ছোটবোনের মত জড়িয়ে ধরে নিয়ে এলেন নিজের সংগঠনে।

তিনিই টিয়াকে দিয়েছেন অনুষ্ঠান সঞ্চালনার দায়িত্ব।

একটাই দাবী, টিয়া যেন শাড়ী পরে আসে। কনস্যুলেট থেকে, মেয়রের অফিস থেকে অতিথিরা আসবেন। সুন্দর করে শাড়ি পরে এলে, টিয়ার ব্যক্তিত্ব আরো ভালো করে ফুটে উঠবে।

এইভাবে যত্ন করে বললে কি আর করা যাবে? টিয়া গেল পিয়ার কাছে।

তুই শাড়ীটা আর কবে পরতে শিখবি দিভাই? কতবার বলেছি একটা গুছিয়ে পরা শাড়ীতে অন্যরকম কমনীয়তা, ব্যক্তিত্ব  ফুটে ওঠে। তুই শুনবি না।” ধমকায় পিয়া।

আচ্ছা এরপর থেকে নিয়ম করে শাড়ী পরব। এবারের মত উদ্ধার করে দে।সন্টি আমার, পন্টি আমার, তোকে মাইকেল কর্স এর ব্যাগ কিনে দেব।

ব্যাগের নামে পিয়া গলল একটু। কলেজে তো যায় ঢাউস একটা বস্তা নিয়ে,খুঁজলে বাঘের দুধ পাওয়া যাবে।এই এলিগ্যান্ট ব্যাগটার শখ হয়েছে তার,দিদি যদি কিনেই দেয় ….

মুখ গম্ভীর করে পিয়া বলল:

শোন কালো বেনারসীটা আছে?ওটার বহর ছোট আর পুরানো নরম-ওটা পরবি। কাল বার করে রাখবি। সন্ধ্যাবেলায় কুঁচি দেওয়া প্র্যাকটিস করবি আমার সামনে।

সারা সন্ধ্যা শাড়ী পরব তো লিখব কখন?? অনুষ্ঠানসূচী, পরিচয়লিপি করতে হবে না?

ভুজুং দিস না তো। তুই ওতে এক্সপার্ট।একদিনে নামিয়ে দিবি।শাড়ী পরবি,সময় নষ্ট না করে যা বলছি কর“।

টিয়া বড়দিদি হলে কি হবে, রাশভারী ছোট বোনকে বেজায় ভয় পায়। আজ অবধি তার শাড়ীর সমস্যা তো সেই বোনই সামলে এসেছে। নইলে মা তো কবেই হাত তুলে দিয়েছেন।

শুরু হল পিয়ার তত্ত্বাবধানে টিয়ার অনলাইন শাড়ী পরার ক্লাস।

ক্লাস করতে করতে, তার মন চলে গেল পিছিয়ে ছোটবেলার, মেয়েবেলার আর কলেজবেলার স্রোতে।

কালো বেনারসীটা টিয়ার প্রথম শাড়ী। শাড়ীটা পড়তে পড়তে বারবার তাই ভেসে আসছিল টুকরো টুকরো স্মৃতিকণা। শাড়ীপড়া অভ্যস করতে করতে,  টিয়ার খুব ইচ্ছা করতে লাগল নতুন করে তার মেয়েবেলাকে ছুয়ে দেখতে। তাই পিয়া যেদিন টাটা করে তাড়াতাড়ি শুতে গেল, টিয়া পুরান ডাইরি খুলে বসল।

পুজো: বছর দশেক আগে

1.1         পূর্ব         

টিয়া কোনো রকমে বছরে দুবার কেঁদে কঁকিয়ে শাড়ি পরে I অষ্টমীর দিন মার শাড়ি পরে অঞ্জলী না দিলে পাড়াতে প্রেস্টিজ থাকেনা I

স্কুল পার করে কলেজে ঢুকলেও সরস্বতী পুজোর দিন শাড়ি পরে দেখা না করলে স্কুলের বন্ধুরা আওয়াজ দেবে।

 মা এবার শাড়ি দেবেন না হুমকি দিয়েছেন, কারণ টিয়া শাড়ির যত্ন করে না। গত বছর ষষ্ঠীর দিন সরস্বতী সেজে দাঁড়াবে বলে মায়ের হলুদ কাতানটা নিয়েছিল। কাঠের বেঞ্চে পেরেক ওইভাবে উঠে থাকবে ও জানবে কি করে? লাফিয়ে নামতে গিয়ে ঝুলে গেলো ব্যাপারটা।

শাড়ির নীচ যে আগের থেকে পচে ছিল মা শুনলেনই না ব্যাপারটা; দিব্যি বলে দিলেন

“দেখতোরছোটবোনতোএকইবেঞ্চেইদাঁড়িয়েছিল ,ওরতোকিছুহয়নি।তোরশাড়িরপ্রতিযত্ননেই।কোনোজিনিসেরপ্রতিযত্ননেই।নিজেপড়বিনাবলেমায়েরজিনিসেরযত্ননিবিনা ?

সেখান থেকে গড়াতে গড়াতে কোনো কিছুর যত্ন নেই, কাজের কোনো ইচ্ছে নেই, পড়াশোনাতে মন নেই। সেবার অংকে ষোলো দিয়ে ষোলো ভাগকে শূন্য লিখে এলি। কলেজে উঠেও উড়নচন্ডী। মা গত উনিশ বছরের খাতা খুলে বসলেন। কোনো রকমে শান্ত করা গেলো।

ব্যাপারটা সামলে দেওয়া যেত যদি না টিয়া সরস্বতী পুজোর দিন কেলোর কীর্তি না করত। সরস্বতী পুজোর দিন মা হলুদ কাতান আর গোলাপি মুশির্দাবাদের সিল্ক বার করে দিলেন।

পিয়া নিজের কলেজের বন্ধুদের সাথে বেড়োবে বলে গোলাপি শাড়িটা বাগাল।বন্ধুদের দলে শুভ আছে। নাম শুনলেই পিয়ার গাল গোলাপি হয়ে যায়।

টিয়া বোঝে বোনের আজ গোলাপি মুশির্দাবাদের সিল্ক চাই, অগত্যা সে নিল  হলুদ কাতান ।

তুমি যাও বঙ্গে ,তোমার কপাল যায় সঙ্গে। দলবলের সাথে বেরিয়ে মজা তো হল ,কুলফি টা খেতে গিয়ে মুশকিল,এত ঠান্ডা বুঝতেই পারেনি।

  „উঃ আঃ“ করতে করতেই কুলফিটা গড়িয়ে পড়ল কোলে।

সেটা মুছতেই বাকি রস গড়িয়ে পড়ে শাড়ীতে দাগ লেগে কেলোর কীর্তি।ম্যানেজ করা যেত, কিন্তু তেলতেলে কাবাবের ঝোল ফেলে দেবী বাড়ি ঢুকলেন সন্ধ্যা সাতটায়। হলুদ কাতান তখন হলুদ প্যাটার্ণে ভরে গেছে ছোপ ছোপ দাগে।

শাড়ী দেখে মা কেঁদেই ফেললেন — ” একিমেয়ে।এতটুকুযত্ননেইতোর? বাবাকতশখকরেনিজেকিনেদিয়েছিলআমাকে।এতবড়ধিঙ্গিমেয়েএতটুকুসাবধানতানেই? তোকেআরশাড়ীপড়তেদেবনা। “

টিয়া তখন চুপ করে গেছিল, মাকে আর রাগায়নি। কিন্তু মা যে এত শক্ত হয়ে যাবেন কে জানত? জুলাই মাসে কলেজ ফেস্টে পড়বে বলে একটা শাড়ী চাইতে গেল, ,মা গম্ভীর গলায় বলে দিলেন ” তুমিআরশাড়ীপাবেনা।নিজেরশাড়ীনিজেকিনেনষ্টকরেযাও।”

টিয়া মহা মুশকিলে পড়ল। পিয়া এসে চুপিচুপি বলল: “তুইভাবিসনাদিভাই।আমিতোরহয়েঅষ্টমীতেশাড়ীচেয়েনেব।আমিচাইলেমাবকবেনা।”

পিয়া ভারী লক্ষ্মী মেয়ে, টিয়ার সবচেয়ে প্রিয় বন্ধু। ছোটবেলায় এত পিটাতো পিয়াকে তাও দিদি দিদি বলে ছুটে আসত। এখন এত নামী কলেজে অঙ্কে অনার্স পড়ছে, কিন্তু অহংকার নেই।

ওই শুভটা যদি ওর এত ভাল লক্ষ্মী বোনের দাম না বোঝে; টিয়া গিয়ে পিটিয়ে আসবে ওকে।

যাই হোক আপাতত হাতের কাছের সমস্যার সমাধান হোক। টিয়া এঁটে বসল যে পুজোতে মায়ের পা ধরে পড়ে যাবে।

 টিভিতে একটা ঐতিহাসিক সিরিয়াল দেখে তার খুব বেনারসী পড়ার শখ হয়েছে।মার লাল বেনারসীটার দিকে ওর খুব লোভ। ছোট্ট সুন্দর লাল টুকটুকে শাড়ী,হাত দিলে শিরশির করে ওঠে মনের কোনায়।

একুশ বছরের হৃদয় কোন অনাগত রোমাঞ্চের অপেক্ষায় থাকে।এই অনুভূতি আবেগের মিশ্রণ — এটা মাকে তো বলা যাবে না। পড়াশোনার নাম নেই,খালি বাঁদরামো , বলে দেবে। বাবাকেও বলে দিতে পারে। বাবা অমনি মেকানিক্স আর ক্যান্টিলিভার নিয়ে পড়বে।

 টিয়ার যুক্তিবাদী এঞ্জিনিয়ার মনের মধ্যে তে কাব্যময় ভাষার এক চোরাস্রোত চলে সেটা বেনারসী তে হাত দিলেই  প্রকাশ হয়ে পড়ে টিয়ার কাছে।

1.2         প্রথম কালো শাড়ী

টিয়া আর পিয়ার মাসতুতো দিদির বিয়ে ঠিক হয়েছে। সামনের মাঘ মাসে।পুজোর সময় তাই দুজনের মহাপ্রাপ্তি – নিজের শাড়ী।

এই প্রজন্মের প্রথম বিয়ে, বাড়ির সবাই আনন্দে ডগমগ। মা বললেন এবার তাহলে ওদের পুজোতে দুটো শাড়ী কিনে দি, বিয়েবাড়িতে পড়বে।

 টিয়া আর পিয়া এই সুযোগে বেনারসী শাড়ীর বায়না করে বসল।

বাবা রাজী হলেন।সবাই মিলে যাওয়া হল নতুন শাড়ী কিনতে।

এই প্রথম নিজের শাড়ী। টিয়ার মনে হল যে এক ধাক্কায় সে বড় হয়ে গেল। এতদিন মায়ের সাথে গিয়ে শাড়ী কিনেছে – মায়ের জন্য,অন্যদের জন্য- বেশ নিরপেক্ষ থাকতে পারত। নিজের শাড়ী কিনতে গিয়ে থমকে গেল সে।

এত রঙ, এত ডিজাইন- কোনটা ছেড়ে কোনটা নেবে??

মাও বুঝে উঠতে পারছেন না ছোটখাটো মেয়েকে কোন শাড়ীতে মানাবে, উল্টে পড়ে যাবে না তো পাড়ে পা জড়িয়ে।

মেয়ে তাঁর বড়ই হয়েছে বয়েসে, পড়াশোনার বাইরে তো তাঁর ছোট্ট দুষ্টূ ভুতি। তার মিষ্টি গোলগাল মেয়ের ছোট, গোল চেহারা নিয়ে আত্মীয়, প্রতিবেশীরা কথা তো বলেই থাকে।মেয়ে সব শুনে হেসে লাফাতে লাফাতে চলে যায়। কিন্তু মা তিনি।মেয়ে কেন সাজতে চায়না,শাড়ী পড়তে চায়না, তিনি জানেন। মেয়ে ভাবে সে বড় হয়েছে, লুকিয়ে মায়ের বেনারসী পড়া,মার চোখে পড়বে না।

 মার চোখে পড়ে মেয়ের কল্পনা ছোট মেয়ের গালের গোলাপী আভা ও তাঁর চোখের আড়াল হয়না।

তার লক্ষ্মীমেয়ে পিয়াকে এই ময়ূরকন্ঠী রঙের বেনারসীতে ভাল মানাবে।

ভুতির হলুদ রঙের শখ-হলুদ কমলা বেনারসীটা দারুন।

তাঁর চিরকালের উল্টো পথে হাঁটা মেয়ে নিয়ে বসল কালো শাড়ীটা। বিয়েবাড়িতে কালো শাড়ী,যাকগে কি আর করা যাবে।শাড়ীটা বহরে অন্যগুলোর থেকে ছোট, মেয়ের পড়তে কষ্ট হবে না।

টিয়ার কমলা হলুদ শাড়ীটা পছন্দ হয়েছিল কিন্তু কালো শাড়ীটা যেন অনন্যা। রুপো জড়ীর কাজ, কালো গায়ের রং- কমলা, হলুদ, সোনারঙের জমকাল নয়, অন্যরকম একটা ব্যক্তিত্ব আছে।

বিয়েবাড়িতে সবাই ওই হলুদ,সবুজ পড়ে, টিয়া অনন্যা।শী মার্চেস টু হার ওন বিট।

শাড়ী হল, সময়মতো তার ব্লাউসপিস থেকে ব্লাউসও হল। কিন্তু কালো শাড়ী অষ্টমীতে পড়া যাবে না। নবমীর সন্ধ্যায় পড়তে পারে। অষ্টমীতে নৈব নৈব চ।

 অষ্টমীতে সালোয়ার কামিজ পড়ে অঞ্জলী দিল টিয়া। মার মিলিটারি হওয়া উচিত ছিল,কিছুতেই শাড়ী দিলনা।

পিয়া দিব্যি মায়ের কমলালেবু রঙের পিওর সিল্ক পড়ে হ্যা হ্যা করতে করতে প্যান্ডেল গেল। পাড়ার খুকু পিসি,মুনি জ্যেঠিমা থেকে শুরু করে, পুপু, বিনু সবাই “কেদিদি,কেবোন ”  করে হেসে নিল।টিয়া দাঁত কিড়মিড় করে  মনে মনে বলল ” দেখে নেব কালকে তোমাদের “।বলে অঞ্জলী দিল। মাঝখান থেকে জি.আর.ঈ এর জন্য প্রার্থনা গুবলেট হল।

সন্ধিপূজায় সামলাতে হবে আর কি।

নবমীর শাড়ী পড়া

শাড়ীটা টিয়া যেবার নবমীতে পড়ল, কেনার সময় মনে হয়েছিল–এত সুন্দর, পড়ার পর মনে হল এক ধাক্কায় বড় হয়ে গেল। নিজেকে কলেজ প্রফেসর লাগছিল।স্প্যানিশ ক্লাসে শিখেছে *soy profesora*. আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজেকে *soy profesora*.বলে ভেংচি কেটে নিল।একটু আগেই মার বকা খেয়েছিল, কিন্তু তাতে কি হয়েছে,পিয়া কুঁচি কুঁচি করে শাড়ী পড়িয়ে দিল।
শাড়ী পড়ে টিয়া যেন হাওয়ায় ভাসতে ভাসতে পূজা মন্ডপে গেল।মা ঠিক বলেছিলেন— নিজের শাড়ী খুব যত্নে সামলাচ্ছিল টিয়া,যেন কিছু না হয়। লক্ষ্মীপুজোর পর শাড়ী কোলে করে ড্রাই ক্লীনার এর কাছে নিয়ে গেছিল। আঁচল চাপা দিয়ে মা হাসছিলেন খুব।
মাসতুতো দিদির বিয়েতে তো সামনে আঁচল দিয়ে খুব স্টাইল মারল।মাও রাগ ফেলে শাড়ীটা পড়তে সাহায্য করলেন। সেফটিপিন দিয়ে আটকানো শাড়ী পড়ে টিয়া তো নেচেও ফেলল একটু।

সময়ের স্রোতে

কলেজ পাসের কয়েক মাসের মধ্যে টিয়া দেশ ছেড়ে চলে এলো বহুদূরে উচ্চশিক্ষার জন্য।
বন্ধু, অভিজ্ঞতা,জীবনদর্শন আসতে আসতে ভরে উঠতে লাগল তার ঝুলি।কালো শাড়ীটা টিয়ার সাথে সাথেই ঘুরতে লাগলো।
প্রথম তখন বিদেশে পড়তে এলো টিয়া,মা স্যুটকেসে শাড়ী টা গুছিয়ে দিয়েছিলেন, বলেছিলেন মাঝে মাঝে পড়িস।শাড়ীটা পড়ে দীপাবলীর উৎসবে সে নেচেও ছিল।তখন ইন্টার্নশিপ করতে অন্য এক দেশে গেল,টিয়া কাঁধের ব্যাগে ভরে নিয়ে গেল শাড়ীটা।বহুবছরের সঙ্গী এই শাড়ী।তাই তো এত নরম, পড়তে এত আরাম।শাড়ীটা যেন জড়িয়ে ধরে জমে থাকা সব স্মৃতির ওম নিয়ে।

অনুষ্ঠানের দিন

দিভাই, শাড়ীটা ইস্ত্রী করেছিলি যখন, আঁচলটা আগে করে পিন দিয়ে দিলে পারতিস।

টিয়ার সম্বিত ফেরে পিয়ার গুরুগম্ভীর গলায়।শাড়ী পড়তে পড়তে অন্যমনস্ক হয়ে পড়েছিল টিয়া,মনটা চলে গিয়েছিল শাড়ীবেলার গল্পে।বোনের আদরমাখা বকা,গল্পের ফাঁকে ফাঁকে আঁচল হয়ে গেল।তারপর পিয়ার নির্দেশানুযায়ী টিয়া শাড়ীর কুঁচি করল।কুঁচির ফাঁকে ফাঁকে মিশে থাকে তার জীবনের কথাএকঘন্টা লাগল টিয়ার তৈরী হতে। বেরনোর আগে আয়নায় একবার তাকিয়ে দেখল নিজেকে টিয়া — এ কোন নারী তাকিয়ে আছে তার দিকে ?? টিয়া বোধহয় অনেকদিন নিজেকে দেখেনি এত গভীরভাবে। সেদিনের সেই মেয়ে, চেঁচিয়ে বেড়াত, লাফিয়ে চলত, কবে হয়ে উঠল এত ব্যক্তিত্বময়ী,শ্রীময়ী।

শেষবারের মত আয়নাতে দেখে স্মিত হেসে দরজা বন্ধ করল টিয়া। দীপাবলীর সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানটি অন্য শহরে হবে,প্রায় ৭০ কি মিঃ দূরে।আস্তে আস্তে শাড়ী সামলিয়ে, চালকের আসনে বসল টিয়া– এখন আর শাড়ী কোথাও জড়িয়ে যায়না।

DISCLAIMER – এই গল্পে বর্ণিত সমস্ত চরিত্র অথবা ঘটনাবলী কাল্পনিক এবং বাস্তবের সাথে কোন মিল নেই | জীবিত বা মৃত মানুষের সঙ্গে বা কোন  ঘটনার সঙ্গে কোন রকমের মিল একান্তই অনিচ্ছাকৃত |
            —————— সমাপ্ত  —————-

All pictures in the blog, unless otherwise mentioned, are taken by the blog. Please do not post the images without permission.

2 comments

  1. Debaleena Poddar

    Asadharon laglo ❤️

    1. DanceofChaos

      Thank you, aste aste likhchhi

Leave a Reply