Shipping to EU, Switzerland
Fast, environmentally friendly shipping with DHL
Free shipping from 40€
ঠাম্মা

ঠাম্মা

Guest article by Madhura


আরো পাঁচটি মেয়ের মতো এই মেয়েটিরও বিয়ে নিয়ে স্বপ্ন ছিল। তা হোক না ১২ বছরের বড় বর। সেই ১৯৫৬-৫৭ এ এটা কি একটা পার্থক্য ছিল নাকি? স্নাতক স্তরের ফাইনাল হওয়ার আগেই বিয়ে হয়ে গেল আশুতোষ কলেজের পদার্থবিদ্যার অধ্যাপক দ্বিজেন্দ্রলাল রায়ের সাথে- ছাত্রমহলে DL নামেই পরিচিত ছিলেন যিনি। তা কলেজের ব্ল্যাকবোর্ডে মাঝেমধ্যে লেখা দেখা যাচ্ছে-“ DL এর প্রতি মমতা হয়”। ভাবী স্ত্রীর নাম নিয়ে এই কটাক্ষ ভালোই উপভোগ করছিলেন অধ্যাপক মহাশয়।
বিয়ের পরেই স্ত্রীকে বাপের বাড়ি পাঠিয়ে দিলেন স্নাতকস্তরের পরীক্ষা শেষ করার জন্য। সুন্দরী নবপরিণীতা গাল ফোলালেন একটু। অনুযোগ করলেন-দুদিন পর বিয়ে করলেন না কেন? বিয়ের পর কি বিরহ সহ্য হয়? অধ্যাপকের জবাব-জন্ম, মৃত্যু, বিয়ে-তিন বিধাতাকে নিয়ে। কি আর করা- মেয়ে চলল বাপের বাড়ীতে পাশের পড়া পড়তে।
অধ্যাপক মশায় ততদিনে ডাক পেয়েছেন জার্মানীর প্রসিদ্ধ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গবেষণার জন্য। চিঠিপত্রের মাধ্যমে কথোপকথন করছেন সেখানকার পণ্ডিত ব্যক্তিদের সাথে। মনে সুপ্ত ইচ্ছা সংস্কৃতে স্নাতক স্ত্রীকেও ওখানে নিয়ে যাবেন। দীর্ঘদিন ধরেই জর্মনীতে সংস্কৃত চর্চা হয়ে আসছে। সমৃদ্ঝ হবেন তিনিও।
অধ্যাপক মশায়ের মাথার ওপর রয়েছেন দুই দাদা। মেজদাদার ছেলে আবার কাকীমার খুব নেওটা। দিনের বেশীর ভাগ সময়তেই সে তার ছোটমার কোলে চেপে বসে থাকে। দেড় বছরের বড় দিদিকে বেশী কাছেই ঘেষতে দেয়না। অধ্যাপক স্বামীর মত অত পড়া পড়া বাতিক নেই মেয়েটির। গুছিয়ে সংসারেই বেশী মন তার। তাই ভাশুরপো-ভাশুরঝির কচি হাতের বেড়ী ভালোই লাগে তার। এসব ছেড়ে সাত সমুদ্র তেরো নদী পার করার খুব ইচ্ছা নেই।
এতকিছুর মাঝে মেয়েটি অনুভব করল তার মধ্যে প্রাণের স্পন্দন। মাতৃত্বের স্বাদ কোন মেয়ে না চায়। কিন্তু মিষ্টি ফুটফুটে মেয়েটা যে থাকার জন্য আসেনি। জন্মের তিন মাসের মধ্যে দুর্গাসপ্তহমীর দিন মহাপ্রস্থানের পথে পা বাড়ালো সে। DL এর হার্ট আগে থেকেই দুর্বল। আত্মজা যে এতটা ‘hurt’ করে যাবে হার্টকে সেটা বোঝেননি তিনি। তাই জর্মনী যাওয়া মুলতবী রেখে আপাতত মেয়ের খোঁজে তিনিও পারি দিলেন না ফেরার দেশে। বলে গেলেন মাকে- মমতার যেন কোনো কষ্ট না হয়। দরকার হলে বিয়ে দিও ওর আবার। অভিমানী মমতা নীরব অশ্রুকে সাক্ষী রেখে জিজ্ঞাসা করলেন দয়িতকে- মহান কি তুমি একাই হতে পারো? তোমার ভালোবাসা নিয়ে পূর্ণ আমি।
সব থেকে ছোট ছেলেকে হারিয়ে ছেলের বউকে কাছে টেনে নিলেন শাশুড়ীমা। এক সন্তানহারা মায়ের কাছে আরেক সন্তানহারা মায়ের আবেদন- সত্যি যদি কিছু দিতে চান মা পড়াশুনার অধিকার দিন আমাকে। বিধবা হওয়ার একমাসের মধ্যে মন বেঁধে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে যাওয়া অনেকের কৌতূহল উদ্রেক করেছিল বইকি। কিন্তু যার হারানোর কিছু নেই তার কিসে ভয়। ২৬ বছরে বাংলায় স্নাতকোত্তর শেষ করলেন। পরীক্ষার দিন দুই ভাশুর আগলে নিয়ে গেছেন পরীক্ষাকেন্দ্রে।
এরপর কি? ভগবান এক জীবনে বোধহয় সব দিক দিয়ে মারে না। বেহালা গার্লস হাই স্কুলের একজন শিক্ষিকা যাচ্ছেন মাতৃকালীন অবসরে। ওই তিন মাসের জন্য বদলিতে বাংলার শিক্ষিকা দরকার। বিশ্ববিদ্যালয়ের শংসাপত্র দেখে কতৃপক্ষ দায়িত্ব দিল উঁচুক্লাসে পরপর সংস্কৃত আর বাংলা ক্লাস নিতে। ছাত্রীদের সাথে পেছনের সারীতে বসে আছেন বড়দিদিমণিও। অধ্যাপক স্বামীকে স্মরণ করে শুরু করলেন অধ্যাপনা, যা পরবর্তী ৩২ বছরের এগিয়ে চলার রসদ।
এই গ্রুপে এর আগেও এই বিষয় নিয়ে লেখা দিয়েছি। এনাকে ঠাম্মা বলে জেনেছি আমি জন্ম থেকে।
স্বামীর হাত ধরে না হলেও নাতনীর কাছে জর্মনী যাওয়া হয়েছিল তার। স্বামী তাকে স্বাবলম্বী করে গেছেন। তাই একা ঘুরে বেড়িয়েছেন ভারতে এবং সর্বশেষে ভারতের বাইরে একবার।
চার মাস পূর্ণ হয়েছে ঠাম্মার চলে যাওয়ার। ঘাটা বড় টাটকা এখনো। কিন্তু ঠাম্মার মুখের হাসি কখনো মিলিয়ে যেতো না। শত দু:খেও বলতে পারত-অন্ধকারের উৎস হতে উৎসারিত আলো।

Thanks and Regards,
Madhura Roy

ঠাম্মাReplyForward

ঠাম্মা

Don’t miss out!

We regulary publish relevant blog posts about journaling and work life balance.

We don’t spam! Read our privacy policy for more info.