Pen By Debarati
#ভূত_না_বাস্তব #দেবারতি
ভূতের গল্প লেখক হিসেবে দীপঙ্কর সরকারের নাম বাংলা সাহিত্য জগতে সুপরিচিত। নিজের বেয়াল্লিশ বছরের জীবনে ভূতের গল্প লিখেছেন প্রায় ৩০০। কলকাতার একটি জনপ্রিয় রেডিও স্টেশনে শনিবার রাত ১১ টা থেকে ১ টা অব্দি একটা প্রোগ্রাম হয় যেখানে দীপঙ্কর বাবুর ভূতের গল্প পাঠ করে শোনায় রেডিও স্টেশনের একজন আর জে নাম প্রিয়াঙ্কা।
প্রিয়াঙ্কার পুরো নাম প্রিয়াঙ্কা দত্তগুপ্ত। অত্যন্ত সাবলিল ভাবে সে কলকাতার জনতা কে শনিবার রাত ১০ টা থেকে ১ টা অব্দি দীপঙ্কর বাবুর ভূতের গল্প পাঠ করে শোনায় সে।
দীপঙ্কর বাবুর জন্মদিনের দিন রেডিও স্টেশনের পক্ষ থেকে একটা টকশো আয়োজন করা হয়, যেখানে লেখক দীপঙ্কর বাবু নিজের কোন একটা গল্প পাঠ করবেন। আর প্রিয়াঙ্কা থাকবে সঞ্চালিকার ভূমিকায়, যেখানে প্রশ্ন করবে লেখক কে আর উনি অন এয়ার তার উত্তর দেবেন।
অনুষ্ঠানের দিন সন্ধ্যে থেকে খুব বৃষ্টি শুরু হল। রেডিও স্টেশন থেকে প্রথমে ঠিক করা হল যে প্রোগ্রাম ক্যানসেল করে দেওয়া হবে, কিন্তু ভূতের গল্প এই বৃষ্টি বাদলার দিনে খুব ভালো জমবে, তাই দুজনের বাড়িতে গাড়ি পাঠিয়ে ওদের আনানোর ব্যবস্থা করা হল।
সঠিক সময়ে অনুষ্ঠান শুরু হল। গল্প পাঠের পর রাত ১১:৪৫ এ প্রিয়াঙ্কা দীপঙ্কর বাবুর প্রশ্নোত্তর পর্ব শুরু হল।
– “আজ তো আপনার জন্মদিন ! কি উপহার পেতে ইচ্ছা করে আপনার আজকের দিনে? “
– “আমি চাই আমার জন্মদিন আর মৃত্যুদিন যেন একই দিনে পালিত হয়। “
– “অদ্ভুত চাহিদা, যদিও এই বছর আর সেটা হলোনা দীপঙ্কর বাবু।”
– “কেন বলছ এ কথা, কি করে জানলে যে এই বছর আমার চাহিদা পূরণ হবে না। “
প্রিয়াঙ্কা হেসে ফেলল, তারপর মাইকে একজন দর্শকের প্রশ্ন নেয়ার জন্য ফোনে কল রিসিভ করল।
– ” ভূতের গল্প লেখকের অনুষ্ঠান যখন তখন বন্ধুরা এরকম উত্তর তো আমরা আশা করতেই পারি, কি বলছে কলকাতা, এবার শুনে নি। বল কে আছো লাইনে। “
কিছুক্ষন কোন সাড়াশব্দ নেই, লাইনে গন্ডগোল আছে ভেবে ডিসকানেক্ট করতে যাওয়ার আগে শুনল, কে যেন কথা বলল, গলাটাও খুব চেনা।
– “প্রিয়াঙ্কা আমার স্বপ্ন পূরণ হয়েছে। সারা কলকাতাবাসী সাক্ষী রইল এর। আমি আর এই দুনিয়াতে নেই। ভালো থেক।”
ভয়ে পাশে ফিরে দেখল পাশের চেয়ারটা খালি, দীপঙ্কর বাবু আর ওতে বসে নেই। আতঙ্কে চিৎকার করে দরজা দিয়ে বেড়িয়ে দেখল স্টেশনে ডিরেক্টরের ঘর অন্ধকার।
তাহলে কি এই রেডিও স্টেশনে ও একা ! সিঁড়ি দিয়ে দুর্দার করে নামতে নামতে শুনল পিছনে দীপঙ্কর বাবুর অট্টহাসি। আর কিছু মনে নেই প্রিয়াঙ্কার।
.
.
.
যখন জ্ঞান হল, তখন প্রায় ১ টা বাজে রাত, আসে পাশে তাকিয়ে দেখল ও রেডিও স্টেশনের মেডিকেল রুমে শুয়ে আছে, পাশে বসে রাতের আর জে তপতি দি আর স্টেশনে ডিরেক্টর।
স্টেশন ডিরেক্টর ওর দিকের তাকিয়ে বলল,
– “ড্রাইভার টা এই ফিরল, বলল রাস্তায় গাড়ি খারাপ হয়েছিল। ও দীপঙ্কর বাবুর বাড়ি অবধি যেতেই পারেনি। আর মিনিট পাঁচেক আগে ওনার বাড়ি থেকে ফোন এসেছিল, রাত ১১:৩০ টার পরে, কার্ডিয়াক এরেস্টে দীপঙ্কর বাবুর মৃত্যু হয়। “
©দেবারতি_ভৌমিক
—————– সমাপ্ত —————–
Disclaimer: Content submitted by author has been published with faith that it is original creation of author. The blog takes no responsibility in the event of conflict. Please contact the author directly.