Bengali by DanceofChaos @erimdance
সুকুমার রায় লিখেছিলেন–
গোঁফকে বলে তোমার আমার—গোঁফ কি কারো কেনা? গোঁফের আমি গোঁফের তুমি, তাই দিয়ে যায় চেনা।”
Sukumar Roy
তা সে যদি হয় ” নামের আমি নামের তুমি,নাম দিয়ে যায় চেনা “, নাম যদি অন্যরকম হয়,উচ্চারণ করতে মুশকিল হয়, তখন কি সেই নাম দিয়ে আর চেনা যায় ?
সেক্সপীয়ারের নায়িকা বলেছিলেন ” গোলাপকে যে নামেই ডাকনা কেন, মধুর তার গন্ধ,নামে কি রায় আসে।„
W. Shakespeare
কিন্তু নিজের অতি শখের নামটির যদি নানা ভাবে উচ্চারিত হয়,তখন সবসময় আর গন্ধ পাওয়া যায় না।
আমার নিজের নামটি খুব সুন্দর সংস্কৃতের নাম। দুঃখের বিষয় কেউ ঠিক করে নাম ধরে ডাকতে পারেনা। ছোট থেকেই লোকজনের ভুল উচ্চারণ ঠিক করে চলেছি।
কলেজে উঠে আমার ভাল নামের একটি ভগ্নাংশ ডাকনাম হল– ত্রিকোন মিতির *ট্যান ৯০*, আবার তার ডাকনাম হল *৯০*।
আজ অব্দি জানলাম না *নব্বই* কেন ? ত্রিশ, ষাট বা পঁচাত্তর কেন নয়। এত বিরক্ত লাগতো আমার।
ওই নামে ডাকলেই চেঁচাতাম, এই ট্যান বলবি না বলছি।
কলেজ পেড়িয়ে বিশ্ব বিদ্যালয়। সর্বভারতীয়, সর্বদেশীয় সহপাঠী-নী সেখানে। বহুদুরের দেশে একা এসেছি পড়াশোনা করতে আমরা অনেকেই।
ভারতীয়রা তাদের সমস্কৃতম জ্ঞান দেখান, আমাকে আমার নামের সঠিক উচ্চারণ শেখান। সঙ্গে BONGOLI FROM KOLKOTTA, EVERYTHING ROSOGOLLA বলে মজাও চলে।
ছোট থেকে আর যাই হোক চুপ করে অন্যায় মেনেছি কেউ বলবে না। প্রত্যুত্তরে তাদের প্রাদেশিক উচ্চারণ নিয়ে উপযুক্ত জবাবও থাকে।
দেশ থেকে বহুদূরে, তাই এইসব ভুলে আস্তে আস্তে বন্ধু হয়ে উঠি।
নামানামির বিতর্কে না গিয়ে আবার আমি বন্ধুদের কাছে ত্রিকোন মিতির ট্যান হয়ে যাই।
এক বন্ধুর বাড়িতে সবাই আড্ডা দিতে যাই,তিনি হয়ে ওঠেন আমাদের বাবাজী।
তেমনি রন্ধনকুমার, ছোলাবাটুরা নামকরণ হয় কারুর। নামের পিছনে লুকিয়ে থাকে নানা মজার গল্প।
এক বন্ধুর চোখে কিছুই এড়ায় না– কে কার সঙ্গে প্রেম করছে, কে অধ্যাপককে তেল মেরে থিসিসের ভাল বিষয় জোগাড় করছে– তার নাম হয় বি.বি.সি র আদলে আ.বি. সি , আমাদের ছাত্রছাত্রী মন্ডলের আকাশবাণী সে।
পরদেশী সহপাঠী-পাঠিনীরা চেষ্টা করেন নাম আয়ত্ব করতে। তাদের জিভের জড়তা ভাঙতে চায়না। প্রবল প্রচেষ্টায় মাঝে মাঝে উচ্চারণ করেন তাঁরা আমাদের নাম, আবার মাঝে মাঝে জড়িয়ে একাকার।
মনিশঙ্করদার ল্যাব পার্টনার তো প্রফেসরের সামনে মনি কে মনিকা করে দিল, ‚ „ Mani is the short for Manika“ বলে; রোল নম্বর আর মেলে না।
প্রফেসর রূদ্ররূপ ধারণ করেন প্রায় ,শেষে বোঝা গেল মনিশঙ্কর।
ল্যাব শুরুতে মিঃ আর মিসেস সম্বোধন হয়, মিস বলে কিছু নেই। পুরুষরা সবাই মিঃ এবং নারীরা মিসেস।
ক্লাস ভর্তি বন্ধুদের সামনে ল্যাবের দাদা আমাকে মিসেস রয় বলে দিলেন।
বাকিরা ছাড়বে কেন, “বিয়ে করলি,জানালি না?“
মাস পড়তেই স্টুডেন্ট জবের টাকা হাতে পেতেই দলবল ধরে ক্যান্টীনে নিয়ে গেল বিয়ের খাবার খাওয়া বলে।
শিক্ষাজীবন শেষ হয়ে কর্মজীবন শুরু হল। নিজের সহকর্মীদের নাম ধরে সবাই ডাকে, এমনকি বস কেও।
সারাজীবন মায়ের শিক্ষা গুরুজনদের নাম ধরে না ডাকা। এখানে এসে যখন যেমন তখন তেমন মেনে পিতৃসম বসকেও নাম ধরে ডাকা।
সময়ের তালে তালে এখন কর্মজগতে ম্যাডাম বা মিসেস অমুক অনেকেই ডাকে। প্রথমবার চমকে উঠেছিলাম ম্যাডাম ডাকে, এখন আর চমকাই না।
কঠিন নামটা অনেকেই অনেক সময় চেষ্টা করেও উচ্চারণ করতে পারেন না। তাদের স্মিত হেঁসে আমাকে মিসেস রয় বললেই হবে বলে আশ্বস্ত করি।
জীবনবল্লভ ও আমার নাম উচ্চারণ করতে হোঁচট খান।
আমি ভাবতাম আদর করে সোনামণি বলে– পরে বুঝলাম নাম উচ্চারণ করার পরিশ্রম এড়াতে।
বয়সের সাথে সাথে নামের উচ্চারণ নিয়ে খুঁতখুঁতানি কমছে। যাঁরা চেষ্টা করেন, আমার দিক দিয়ে চেষ্টা করি সাহায্য করতে। আশ্বস্ত করি ডাকনাম হলেও চলবে।
এখন বন্ধুদের ট্যান তাকাতে আর বিরক্ত লাগে না।
নবীন বসন্তের ছোঁয়া এসে মনে করিয়ে দেয় সেই নির্মল সময়ের কথা।
Image courtesy : Christian . This was drawn exclusively by him for using in the blog and is part of the copyright of the blog. Do not publish without permission.