ShortStory by DanceofChaos
পশ্চিমদেশের নিরিবিলি এক শহরে আমাদের বাস, আমি এবং আমার জর্মন পতি।
সোম থেকে শুক্র কর্তা-গিন্নী অফিস যাই। অফিসে ক্যান্টিনে খাই। সপ্তাহে একাধিক দিন সন্ধেবেলা বাইরে খাই বা আনিয়ে নি।হপ্তায় দু-তিন দিন যতন করে রাঁধি – দুইজনেই খুশি। দিব্যি চলছিল, এমন সময় করোনা দেবীর প্রাদুর্ভাব।
আমাদের এখানে February র শেষ থেকে চলাফেরার নিষেধাজ্ঞা, এই কিছুদিন আগে নিয়ম শিথিল হয়েছে। কিন্তু অফিস যাওয়া এখনও নৈব নৈব চ।টানা ছয় মাসের বেশী হল হোমঅফিস করছি দুই জন।বাড়ি থেকেই কাজ, সকালে ওঠা নেই, কোনরকমে নাকে মুখে গুজে দৌড়নের দরকার নেই; প্রথম কয়েকদিন বেশ গেল। তারপর দূরের ঘন কাশবন হঠাৎ ফিকে হয়ে গেল। ক্যান্টিনের আলুনি তরকারী আর স্যালাডের স্বাদ বহুদিন পাই না, কোনদিন ভাবিনী তার জন্য মন কেমন করবে। কারণ কিছুই না—দু বেলা খাবারের ব্যবস্থা করে, অফিসের কাজ সামলাতে প্রাণ ওষ্ঠাগত।
এতদিন যা মাঝেসাঝে হোমঅফিস, সে শুধু আমার থাকত। কর্তার দুপুরের খাওয়াদাওয়া অফিসে হত, আমাকে অত মাথা ঘামাতে হত না। এখন তিনি দুই বেলা বাড়ীতে খান এবং বায়না করেন। আমার কর্তা এমনিতে বেশ সুবোধ, রান্নাঘরে তিনি আমার সুশেফ (sous-chef)। নিজেও এটা ওটা ভালই পারে- নুডল, নানা রকমের স্যালাড, আলুনি তরকারী। কিন্তু আমি ভাল মন্দ খাইয়ে মাথায় তুলেছি– এখন নুডলে আর মন ভরে না। তারপর পালোয়ান মানুষ তিনি- রোজ দশ কিমি না দৌড়লে চলে না, আমার আর ওনার আহারের অনুপাত এক:আড়াই …… অন্ন সংস্থান করতে করতে চুল পেকে গেল।
শেষে ভাল উপায় করেছি- ক্যাসেরোল। ঘরে যা কিছু আছে, সব দেওয়া যায়, অনেক কিছু থাকে বলে পেট ভরে, স্বাদ বেশ ভালই হয়। ইচ্ছা হলে উপরে চীজ দিয়ে বেক করে নাও, একদম ইটালিয়ান লাগবে খেতে।
অল্পে পেট ভরে যায় বলে, বড় বেকিং ফর্মের এক বাটি করলেই হয়, আমাদের দুজনের দুদিন চলে যায়। এই প্রসঙ্গে বলি, আমি সব আলাদা করে রান্না করে বেক করতে দি, কাজেই বেকিং ওভেন না থাকলেও, অসুবিধা নেই। প্রতিটা স্তর বসিয়ে নিতে পারলেই হল।
রান্নার প্রনালী
একদম নিচের স্তর বা বেস্ করতে ভারী কিছু লাগে: সেদ্ধ ভাত, সেদ্ধ নুডল বা ম্যাশড পোটাটো(আলুসেদ্ধ মাখা);
এর উপর দিয়ে একটা স্তর দিতে হয়- তরকারি, মাংস দিয়ে আর ঘরে যা আছে সেই সবজী দিয়ে। একদম নিরামিষ করলে মাংস বাদ দিয়ে পনীর বা সবজী শুধু দি। তরকারী ইচ্ছামত মসলা দিয়ে বানাই, যেদিন যেমন মন করে। কর্তার বিলিতি জীভ- ঝাল সয় না, তাই মেপেজুপে মসলা দেওয়া।
তরকারি উপর আবার একটু ভাত বা আলুসেদ্ধ দিয়ে তৃতীয় স্তর।
ইচ্ছা হলে এর উপর নরম কিছু দেওয়া যেতে পারে। তরকারি বেঁচে থাকলে সেটাও আবার দেওয়া যেতে পারে।
যদি বেক করা হয়, তবেই এর উপরে চীজ ছড়িয়ে, দশ-পনের মিনিট বেক করে নেওয়া, ব্যস কাজ শেষ। বেক না করলে বা চীজ না দিতে চাইলে, দরকার নেই। এটা ব্যক্তিগত পছন্দের ব্যাপার।
পরিবেশন করার আগে উপরে একটু গাজর, শশা, টমেটো , পেঁয়াজ এইসবের কুচি ছড়িয়ে দিলে দেখতে ভাল লাগে। স্যালাড হিসাবে খাওয়াও যায়।
রান্নাতে স্বাদ মত নুন দেবেন। খেয়াল রাখবেন অনেকগুলি স্তর- তাই নুন একটু মাপে দিতে হয়।
পরিশেষে অল্প লেবুর রস উপরে ছড়িয়ে দেবেন।
যবে থেকে এটা করছি, দেখছি খাওয়ার সমস্যা অনেকটাই কমে গেছে।
আমার খেতে ়ভাল লাগে, বারবার রান্না করতে হয় না। সেও খুশি; এটা খেতে নাকি দারুণ, বিশেষ করে পালোয়ানি করে আসার পরে।
ক্যাসেরোল বানানোর বুদ্ধি নিয়ে আজকাল নানারকমের খাবার সরন্জাম করে রাখি, তাড়াতাড়ি যাতে বানিয়ে নিতে পারি।
হোমঅফিস হয়ে কাজের চাপ বড্ড বেড়ে গেছে। দিন যে কখন শুরু হয়, বুঝতেই পারি না। সকালে উঠে কফির কাপ নিয়ে কাজে বসি, কখন যে বারোটা বাজে, টেরই পাই না, নাকেমুখে গুজে আবার বসি- সকাল গড়িয়ে সন্ধ্যা গড়িয়ে রাত হয়ে যায়।
হেঁশেলে সময় কাটিয়ে, যত্ন করে রান্না করা, উঠেই গেছে প্রায়। মিলে মিশে দুজন মিলে এটাই করে নি কাজের ফাঁকে।
খেয়ে বলবেন কিন্তু কেমন লাগল।
All pictures in the blog, unless otherwise mentioned, are taken by the blog. Please do not post the images without permission.