Shipping to EU, Switzerland
Fast, environmentally friendly shipping with DHL
Free shipping from 45€

Chapter 2 পুজো: বছর দশেক আগে

Bengali Fiction by Danceofchaos


1.1         পূর্ব         

টিয়া কোনো রকমে বছরে দুবার কেঁদে কঁকিয়ে শাড়ি পরে I অষ্টমীর দিন মার শাড়ি পরে অঞ্জলী না দিলে পাড়াতে প্রেস্টিজ থাকেনা I

স্কুল পার করে কলেজে ঢুকলেও সরস্বতী পুজোর দিন শাড়ি পরে দেখা না করলে স্কুলের বন্ধুরা আওয়াজ দেবে।

 মা এবার শাড়ি দেবেন না হুমকি দিয়েছেন, কারণ টিয়া শাড়ির যত্ন করে না। গত বছর ষষ্ঠীর দিন সরস্বতী সেজে দাঁড়াবে বলে মায়ের হলুদ কাতানটা নিয়েছিল। কাঠের বেঞ্চে পেরেক ওইভাবে উঠে থাকবে ও জানবে কি করে? লাফিয়ে নামতে গিয়ে ঝুলে গেলো ব্যাপারটা।

শাড়ির নীচ যে আগের থেকে পচে ছিল মা শুনলেনই না ব্যাপারটা; দিব্যি বলে দিলেন

“দেখ তোর ছোট বোন তো একই বেঞ্চেই দাঁড়িয়ে ছিল ,ওর তো কিছু হয়নি। তোর শাড়ির প্রতি যত্ন নেই। কোনো জিনিসের প্রতি যত্ন নেই। নিজে পড়বি না বলে মায়ের জিনিসের যত্ন নিবি না ?

সেখান থেকে গড়াতে গড়াতে কোনো কিছুর যত্ন নেই, কাজের কোনো ইচ্ছে নেই, পড়াশোনাতে মন নেই। সেবার অংকে ষোলো দিয়ে ষোলো ভাগকে শূন্য লিখে এলি। কলেজে উঠেও উড়নচন্ডী। মা গত উনিশ বছরের খাতা খুলে বসলেন। কোনো রকমে শান্ত করা গেলো।

ব্যাপারটা সামলে দেওয়া যেত যদি না টিয়া সরস্বতী পুজোর দিন কেলোর কীর্তি না করত। সরস্বতী পুজোর দিন মা হলুদ কাতান আর গোলাপি মুশির্দাবাদের সিল্ক বার করে দিলেন।

পিয়া নিজের কলেজের বন্ধুদের সাথে বেড়োবে বলে গোলাপি শাড়িটা বাগাল।বন্ধুদের দলে শুভ আছে। নাম শুনলেই পিয়ার গাল গোলাপি হয়ে যায়।

টিয়া বোঝে বোনের আজ গোলাপি মুশির্দাবাদের সিল্ক চাই, অগত্যা সে নিল  হলুদ কাতান ।

তুমি যাও বঙ্গে ,তোমার কপাল যায় সঙ্গে। দলবলের সাথে বেরিয়ে মজা তো হল ,কুলফি টা খেতে গিয়ে মুশকিল,এত ঠান্ডা বুঝতেই পারেনি।

  „উঃ আঃ“ করতে করতেই কুলফিটা গড়িয়ে পড়ল কোলে।

সেটা মুছতেই বাকি রস গড়িয়ে পড়ে শাড়ীতে দাগ লেগে কেলোর কীর্তি।ম্যানেজ করা যেত, কিন্তু তেলতেলে কাবাবের ঝোল ফেলে দেবী বাড়ি ঢুকলেন সন্ধ্যা সাতটায়। হলুদ কাতান তখন হলুদ প্যাটার্ণে ভরে গেছে ছোপ ছোপ দাগে।

শাড়ী দেখে মা কেঁদেই ফেললেন — ” এ কি মেয়ে। এতটুকু যত্ন নেই তোর? বাবা কত শখ করে নিজে কিনে দিয়েছিল আমাকে।এতবড় ধিঙ্গি মেয়ে এতটুকু সাবধানতা নেই? তোকে আর শাড়ী পড়তে দেব না। “

টিয়া তখন চুপ করে গেছিল, মাকে আর রাগায়নি। কিন্তু মা যে এত শক্ত হয়ে যাবেন কে জানত? জুলাই মাসে কলেজ ফেস্টে পড়বে বলে একটা শাড়ী চাইতে গেল, ,মা গম্ভীর গলায় বলে দিলেন ” তুমি আর শাড়ী পাবে না। নিজের শাড়ী নিজে কিনে নষ্ট করে যাও।”

টিয়া মহা মুশকিলে পড়ল। পিয়া এসে চুপিচুপি বলল: “তুই ভাবিস না দিভাই। আমি তোর হয়ে অষ্টমীতে শাড়ী চেয়ে নেব। আমি চাইলে মা বকবে না।”

পিয়া ভারী লক্ষ্মী মেয়ে, টিয়ার সবচেয়ে প্রিয় বন্ধু। ছোটবেলায় এত পিটাতো পিয়াকে তাও দিদি দিদি বলে ছুটে আসত। এখন এত নামী কলেজে অঙ্কে অনার্স পড়ছে, কিন্তু অহংকার নেই।

ওই শুভটা যদি ওর এত ভাল লক্ষ্মী বোনের দাম না বোঝে; টিয়া গিয়ে পিটিয়ে আসবে ওকে।

যাই হোক আপাতত হাতের কাছের সমস্যার সমাধান হোক। টিয়া এঁটে বসল যে পুজোতে মায়ের পা ধরে পড়ে যাবে।

 টিভিতে একটা ঐতিহাসিক সিরিয়াল দেখে তার খুব বেনারসী পড়ার শখ হয়েছে।মার লাল বেনারসীটার দিকে ওর খুব লোভ। ছোট্ট সুন্দর লাল টুকটুকে শাড়ী,হাত দিলে শিরশির করে ওঠে মনের কোনায়।

একুশ বছরের হৃদয় কোন অনাগত রোমাঞ্চের অপেক্ষায় থাকে।এই অনুভূতি আবেগের মিশ্রণ — এটা মাকে তো বলা যাবে না। পড়াশোনার নাম নেই,খালি বাঁদরামো , বলে দেবে। বাবাকেও বলে দিতে পারে। বাবা অমনি মেকানিক্স আর ক্যান্টিলিভার নিয়ে পড়বে।

 টিয়ার যুক্তিবাদী এঞ্জিনিয়ার মনের মধ্যে তে কাব্যময় ভাষার এক চোরাস্রোত চলে সেটা বেনারসী তে হাত দিলেই  প্রকাশ হয়ে পড়ে টিয়ার কাছে।

1.2         প্রথম কালো শাড়ী

টিয়া আর পিয়ার মাসতুতো দিদির বিয়ে ঠিক হয়েছে। সামনের মাঘ মাসে।পুজোর সময় তাই দুজনের মহাপ্রাপ্তি – নিজের শাড়ী।

এই প্রজন্মের প্রথম বিয়ে, বাড়ির সবাই আনন্দে ডগমগ। মা বললেন এবার তাহলে ওদের পুজোতে দুটো শাড়ী কিনে দি, বিয়েবাড়িতে পড়বে।

 টিয়া আর পিয়া এই সুযোগে বেনারসী শাড়ীর বায়না করে বসল।

বাবা রাজী হলেন।সবাই মিলে যাওয়া হল নতুন শাড়ী কিনতে।

এই প্রথম নিজের শাড়ী। টিয়ার মনে হল যে এক ধাক্কায় সে বড় হয়ে গেল। এতদিন মায়ের সাথে গিয়ে শাড়ী কিনেছে – মায়ের জন্য,অন্যদের জন্য- বেশ নিরপেক্ষ থাকতে পারত। নিজের শাড়ী কিনতে গিয়ে থমকে গেল সে।

এত রঙ, এত ডিজাইন- কোনটা ছেড়ে কোনটা নেবে??

মাও বুঝে উঠতে পারছেন না ছোটখাটো মেয়েকে কোন শাড়ীতে মানাবে, উল্টে পড়ে যাবে না তো পাড়ে পা জড়িয়ে।

মেয়ে তাঁর বড়ই হয়েছে বয়েসে, পড়াশোনার বাইরে তো তাঁর ছোট্ট দুষ্টূ ভুতি। তার মিষ্টি গোলগাল মেয়ের ছোট, গোল চেহারা নিয়ে আত্মীয়, প্রতিবেশীরা কথা তো বলেই থাকে।মেয়ে সব শুনে হেসে লাফাতে লাফাতে চলে যায়। কিন্তু মা তিনি।মেয়ে কেন সাজতে চায়না,শাড়ী পড়তে চায়না, তিনি জানেন। মেয়ে ভাবে সে বড় হয়েছে, লুকিয়ে মায়ের বেনারসী পড়া,মার চোখে পড়বে না।

 মার চোখে পড়ে মেয়ের কল্পনা ছোট মেয়ের গালের গোলাপী আভা ও তাঁর চোখের আড়াল হয়না।

তার লক্ষ্মীমেয়ে পিয়াকে এই ময়ূরকন্ঠী রঙের বেনারসীতে ভাল মানাবে।

ভুতির হলুদ রঙের শখ-হলুদ কমলা বেনারসীটা দারুন।

তাঁর চিরকালের উল্টো পথে হাঁটা মেয়ে নিয়ে বসল কালো শাড়ীটা। বিয়েবাড়িতে কালো শাড়ী,যাকগে কি আর করা যাবে।শাড়ীটা বহরে অন্যগুলোর থেকে ছোট, মেয়ের পড়তে কষ্ট হবে না।

টিয়ার কমলা হলুদ শাড়ীটা পছন্দ হয়েছিল কিন্তু কালো শাড়ীটা যেন অনন্যা। রুপো জড়ীর কাজ, কালো গায়ের রং- কমলা, হলুদ, সোনারঙের জমকাল নয়, অন্যরকম একটা ব্যক্তিত্ব আছে।

বিয়েবাড়িতে সবাই ওই হলুদ,সবুজ পড়ে, টিয়া অনন্যা।শী মার্চেস টু হার ওন বিট।

শাড়ী হল, সময়মতো তার ব্লাউসপিস থেকে ব্লাউসও হল। কিন্তু কালো শাড়ী অষ্টমীতে পড়া যাবে না। নবমীর সন্ধ্যায় পড়তে পারে। অষ্টমীতে নৈব নৈব চ।

 অষ্টমীতে সালোয়ার কামিজ পড়ে অঞ্জলী দিল টিয়া। মার মিলিটারি হওয়া উচিত ছিল,কিছুতেই শাড়ী দিলনা।

পিয়া দিব্যি মায়ের কমলালেবু রঙের পিওর সিল্ক পড়ে হ্যা হ্যা করতে করতে প্যান্ডেল গেল। পাড়ার খুকু পিসি,মুনি জ্যেঠিমা থেকে শুরু করে, পুপু, বিনু সবাই “কে দিদি,কে বোন ”  করে হেসে নিল।টিয়া দাঁত কিড়মিড় করে  মনে মনে বলল ” দেখে নেব কালকে তোমাদের “।বলে অঞ্জলী দিল। মাঝখান থেকে জি.আর.ঈ এর জন্য প্রার্থনা গুবলেট হল।

সন্ধিপূজায় সামলাতে হবে আর কি।

DISCLAIMER – এই গল্পে বর্ণিত সমস্ত চরিত্র অথবা ঘটনাবলী কাল্পনিক এবং বাস্তবের সাথে কোন মিল নেই | জীবিত বা মৃত মানুষের সঙ্গে বা কোন  ঘটনার সঙ্গে কোন রকমের মিল একান্তই অনিচ্ছাকৃত |
            —————— সমাপ্ত  —————-

Chapter 2 পুজো: বছর দশেক আগে

SAVE 10% NOW

Subscribe to our shop newsletter and save 10% on your first purchase!

We don’t spam! Read our privacy policy for more info.

One comment

  1. DanceofChaos

    Test

Comments are closed.