#গৃহবন্দি #দেবারতি ভৌমিক
Author: Debarati Bhowmick
Featured Image courtesy foodledoofle. Copyright reserved by the photographer.
আজ অনেকদিন ধরেই শ্ৰীময়ী গৃহবন্দী আছে। ওর বাইরে বেরোনো নিয়ে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে ওর বাবা। ওর ফোনটাও কেড়ে নিয়েছে। বাবা সকল কে বলেছে, অসুখের কারণে শ্রীময়ী গৃহবন্দি, যাতে আসল ব্যাপারটা চাউর না হয়ে যায়। যে বাবা কে শ্রীময়ী খুব ভালোবাসত, আজ সেই শ্রীময়ীর প্রেমের পথের কাঁটা ওর নিজের বাবা।
জানলার এক পাশে চুপ করে বসে থাকে শ্রীময়ী। মনমরা হয়ে বাইরের আকাশ দেখে, সারাদিন কত মানুষ বাড়ির সামনের রাস্তায় হেঁটে চলে, সেই দিকেই তাকিয়ে থাকে। কত মানুষ যায়, তারা সকলেই কি তাঁদের গন্তব্যে পৌঁছতে পারে? বোধহয় না। যেমন ও জানে না কোনোদিন পৌঁছতে পারবে কিনা ওর ভালোবাসার মানুষের কাছে।
আগে তবু মায়ের সঙ্গে দিনে এক ঘন্টা কথা বলতে পারতো, মা আসত ওর ঘরে খাবারের থালা নিয়ে দিনের বেলায়, তখন অনেক গল্প হত মায়ের সঙ্গে। খাওয়া হয়ে গেলেও, মা থেকে যেত আরও অনেকটা সময়ে ওর ঘরে। বোঝাত সুখমিন্দর কে ভুলে যেতে, বাবা কখনও ওর সঙ্গে সম্পর্ক মেনে নেবে না। শ্ৰীময়ী মায়ের কোলে মাথা রেখে চুপ চাপ শুয়ে থাকত, শুধু বলত ভালোবাসা অন্ধ, মানুষ দেখে ভালোবাসে না।
– এত করে বলছি শোন মা, বাবা মেনে নেবে না।
– আমি অঙ্গীকারবদ্ধ মা, আমাকে এই অনুরোধ করে লাভ নেই। যদি পার, তোমার ফোনটা দিও একবার ওকে কল করব।
রাগ করে ওর মা ঘর ছেড়ে চলে যেত। কিন্তু কিছুটা হলেও মা হয়ত শ্রীময়ীর দুঃখ বুঝত, কিন্তু বাবার মেজাজের সামনে মা অপারগ। তাও লুকিয়ে একদিন ফোন দিয়েছিল শ্রীময়ী কে, ফোন করতে পারেনি, মায়ের ফোনে ব্যাটারী শেষ হয়ে এসেছিল, কেমন আছ জিজ্ঞেস করতেই কল কেটে গেছিল আর ফোন টাও বন্ধ হয়ে গেছিল।
সুখমিন্দরের গলা শোনা হয়নি, তার আগেই ফোন বন্ধ হয়ে গেছিল। অফিস থেকে বাড়ি ফিরে বাবা যেন কেমন করে বুঝে গিয়েছিল যে শ্রীময়ী মায়ের ফোনে হাত দিয়েছিল।
মাকে সেদিন প্রথম ওর জন্য মার খেতে হয়েছিল বাবার কাছে। রাগে অগ্নিশর্মা হয়ে বাবা এক থাপ্পড় মেরেছিল, তাতে মায়ের থেকে বেশি অপমানিত শ্ৰীময়ী নিজে হয়েছিল। মায়ের চোখের জল মোছাতে পারেনি, বাবা এরপরে আর ওর মাকে ওর ঘরে আসতে দিত না। নিজেই দুপুরবেলা অফিস বেরোবার আগে খাবার দিয়ে যেত আর রাতের খাবার অফিস থেকে ফেরার পর। মায়ের সঙ্গেও বেড়ে গেছিল ব্যাবধান।
ধীরে ধীরে শ্ৰীময়ী বুঝতে পারে, ওর বাবা কোনোদিনও ওর আর সুখমিন্দরের সম্পর্ক মেনে নেবে না। এভাবে গৃহবন্দি করে রেখে নিজের পছন্দের কোন ছেলের সঙ্গে বিয়ে দিয়ে দেবে। সেই দুঃখ ও সইতে পারবে না। এর চেয়ে মরে যাওয়া ভাল।
পরের দিন সকালে ৮টা নাগাদ বাবা হঠাৎ করেই শ্রীময়ীর ঘরে ঢুকল। হাতে ফোন ধরা, শ্ৰীময়ীর দিকে তাকিয়ে তাচ্ছিল্য ভরে বলল,
– খুব তো প্রেম প্রীতির সম্পর্ক বলতিস, নে পড়ে দেখ ! কাপুরুষতার নিদর্শন। লড়াই করে নিজের প্রেম কে ছিনিয়ে নেয়ার বদলে আত্মহত্যা করে পালিয়ে গেল।
ধপ করে বসে পড়ল শ্রীময়ী। এসব কি বলছে, বাবা? সুখমিন্দর আর নেই। কেন করল এরকম? বাবার হাত থেকে ফোন নিয়ে দেখল, বাবার ফোনে হোয়াটস্যাপ খোলা, পাশের বাড়ির সেন জেঠু একটা ফেসবুক লিংক পাঠিয়েছে, যেখানে সুখমিন্দরের প্রোফাইলে ওর বন্ধুরা পোস্ট করেছে –
” Our deepest condolences to Sukhminder’s family as she committed suicide last night. “
বাবার দিকে তাকিয়ে, অশ্রুসিক্ত চোখে শ্রীময়ী বলল,
– ভালোবাসার তুমি কিছুই জানো না, বোঝো না।
– সে তুই যা খুশি বল। আমি খুব খুশি আজকে কাল সকালে কল্যাণের সঙ্গে কথা বলব, ওর ছেলের সঙ্গে তোর বিয়ে ফিক্স করে ফেলব। কত বড় ব্যাংকের অফিসার জানিস কল্যাণের ছেলে।
– এখন তো আর অসুবিধা নেই, বাবা। আমার ফোনটা এবার ফেরত দেবে?
শ্রীময়ীর ফোনটা দিয়ে বাবা বেরিয়ে যাওয়ার পরে অনেকক্ষণ চুপচাপ বসে রইল শ্রীময়ী। নাঃ, ভালোবাসা হার মানতে পারে না, এই জীবনে শ্রীময়ী আর কারুর হবে না।
ঘন্টা দুয়েক পর অফিস বেরোনোর আগে বাবা শ্রীময়ীর ঘরে খাবার দিতে এসে যখন দরজা খুলল, তখন তাকিয়ে দেখল,
ঘরের সিলিং ফ্যান থেকে ওড়নার ফাঁস লাগিয়ে ঝুলছে শ্রীময়ী।
এমন সময়ে পাশের বাড়ির সেন দার ফোন,
– বিনয়, রিমলি কি মেসেজ দিয়েছে ফেসবুকে – ” People in love can unite after death. I love you Sukhiminder, here I come. “
শ্রীময়ীর বাবার ফোনেও একটা মেসেজ এসেছিল কিছুক্ষন আগে, দেখা হয়নি।
বাবা, তোমার আপত্তি ছিল আমার ভালোবাসা নিয়ে, কারণ আমি সমকামী। হ্যাঁ আমি সমকামী, তাই ভালোবাসতাম সুখমিন্দর কাউর কে। নিজে নারী হয়ে আরেকজন নারীকেই পছন্দ করতাম। এটা তো কোন অসুখ নয় যে গৃহবন্দি করে রেখে আমার অসুখ সারাবে? দেশের আইন তো আমাদের ভালোবাসা কে মান্যতা দিয়েছে, তাহলে তুমি কেন বাধা দিলে? যার মৃত্যুতে তুমি খুশি হয়েছ বাবা, সে কিন্তু কয়েক মাসের মধ্যে লন্ডন যাচ্ছিল লন্ডন ইউনিভার্সিটি তে কেমিস্ট্রির অধ্যাপিকা হিসেবে যোগদান করতে । আমাদের জীবন টা অনেক সুন্দর হতে পারত, যদি তুমি চাইতে বাবা। বিদায়, ভাল থেক আর পারলে আমাকে ক্ষমা কর।
DISCLAIMER – এই গল্পে বর্ণিত সমস্ত চরিত্র অথবা ঘটনাবলী কাল্পনিক এবং বাস্তবের সাথে কোন মিল নেই | জীবিত বা মৃত মানুষের সঙ্গে বা কোন ঘটনার সঙ্গে কোন রকমের মিল একান্তই অনিচ্ছাকৃত |
—————— সমাপ্ত —————-
If you like the story, kindly share your appreciation with us. It will give us even more encouragement to write and collaborate.
Feel free to read our other guest contributions and creative collaborations.
Do check out other contents of the blog, everyday events, or tips about gardening, travel journals and many more. Contact us, if you want to submit your original content in the blog.
Disclaimer: Content submitted by author has been published with faith that it is original creation of author. The blog takes no responsibility in the event of conflict. Please contact the author directly.