Pen By Madhura
মায়ের টিয়া রঙের শাড়ীটার প্রতি অনেকদিন ধরেই নজর শ্রেয়ার। কিন্তু শাড়ীটা মা মোটেই তাকে দিতে রাজি না। যে নিজের একটা কাজ ঠিক করে করতে পারে না-সে নাকি শাড়ী পরে কলেজে যাবে!!! তবেই হয়েছে! এর আগে স্কুলের শেষ দিনে যখন সব বন্ধুরা শাড়ী পরে বিদায়ীউৎসবে যোগদান করেছিল, তখনও মা কে কিছুতেই শাড়ীর জন্য রাজি করতে পারেনি শ্রেয়া । অগত্যা পুজোতে পাওয়া একটা জমকালো সালোয়ার-কামিজ পরেই বাজিমাত করেছিল সে । কিন্তু শেষরক্ষা হয়নি তাতে। সব বন্ধুরা মিলে আওয়াজ তো দিয়েছিলোই , উল্টে অতি উৎসাহে খাওয়া নিতে গিয়ে বেশ খানিকটা মাংস জামাতে পড়ে গিয়ে কেলেঙ্কারি হয়েছিল -বেশ খানিক বকুনিও জুটেছিল কপালে সেবার।
কিন্তু কলেজ মানে একটা বড় বড় ব্যাপার। সেখানের এতরকম গল্প, এতোরকমের মানুষজন-মা কিছুতেই বুঝতে চাইছে না যে Freshers’ Welcome মানে একটা বিশাল ব্যাপার তার এই ১৮ বছর বয়েসে-শাড়ী না পরলে প্রেস্টিজের পুরো দফারফা। তার মধ্যে শ্রেয়া লক্ষ্য করেছে 2nd year এর সিনিয়র দাদা আনন্দ -যে কিনা প্রথমদিন থেকেই তার প্রতি একটু বেশিমাত্রাতে মনোযোগ দিচ্ছে বলে বাকি বন্ধুদের কাছে খুব আওয়াজ পেয়েছে, সে বেশিরভাগ দিন সবুজ বা সবুজ ঘেঁষা রঙের T-shirt পরেই কলেজে আসে। অতএব মায়ের সবুজ শাড়ীটা চাই-ই -চাই।
মেয়ের কান্ড দেখে মনে মনে হাসেন রমলা । মেয়েরা বড় হয়ে গেলে তারা হয়ে ওঠে মায়ের সব থেকে বড় বন্ধু এবং ভরসার জায়গা। আর মেয়েদের মনের খবর মায়েদের থেকে আর ভালো কে রাখে ? সুতরাং আনন্দের নাম বলতেই যে শ্রেয়ার মুখে একটা আলাদা আভা ছড়িয়ে পরে তা নজর এড়ায়নি রমলার । নিজের এই বয়সটাতে হারিয়ে যেতে ইচ্ছে করে। তাদের সময় তো ক্লাস ৯ থেকে শাড়ী পরতেই হতো -তাই কলেজ আলাদা করে কিছু অনুভূতি দেয়নি সেই অর্থে। তবে রমলার মা একটা দামি সিল্ক শাড়ী কিনে দিয়েছিলেন মেয়েকে তার কলেজে ভর্তি হওয়ার সম্মানার্থে। মায়ের ঐতিহ্য বজায় রাখার জন্য আজ রমলাও মেয়ের জন্য কিনেছেন একটা সুন্দর সিল্ক শাড়ী-রংটা ওই সবুজ ঘেঁষাই । তার ছোট্ট মেয়েটি আজ বড় হয়ে গেছে -কলেজে যাচ্ছে-এই আনন্দটা তার মনেও এভাবেই গাঁথা থাক।
আর দুদিন বাকি Freshers’ Welcome এর। এদিকে মা এখনো কিছুই বলছে না। বন্ধুরা সব প্ল্যান করে ফেললো কে কি রঙের শাড়ী পরবে , তার সাথে ম্যাচিং কি গয়না পরা যায়, ব্যাগ ই বা কি নেয়া যায় -আর সে এখনো মা কে রাজি করাতেই পারলো না শাড়ী পড়ার জন্য । মায়ের ওপর অভিমানে চোখে জল এসে যায় শ্রেয়ার।
সন্ধ্যেবেলাতে অফিস থেকে ফিরে মেয়ের গোমড়া মুখ দেখে রমলা মেয়েকে কাছে ডাকলেন -মাথায় হাত বুলিয়ে বললেন-” কিরে-মায়ের ওপর খুব অভিমান হচ্ছে বুঝি? তা মায়ের পুরোনো শাড়ীর প্রতি অত টান কেন? কলেজে প্রথমবার নাহয় একটা নতুন শাড়ী পরেই শুরু হোক। ”
এইবলে রমলা মেয়ের হাতে তুলে দিলেন তার জন্য কেনা সুন্দর শাড়ীটা । আর মায়েদের কাজ তো সবসময়তেই গোছানো -তাই আনুসাঙ্গিক হার-দুল, ব্যাগ-সব গুছিয়ে দিলেন মেয়েকে । ” You are the best”- বলে জড়িয়ে ধরলো শ্রেয়া তার মাকে ।
If you want to read more stories by Madhura and other different write-ups in the blog, please encourage us with like, shares and comments.
Khb sundor
thanks. will let the author know.
ছোটবেলায় প্রথম শাড়ি পরার আনন্দটাই আলাদা…
ছোটবেলায় শাড়ি পরার আনন্দ টাই আলাদা থাকে…
ঠিক